কেন মানুষকে জাজ করা উচিত নয়?

সুখী, সমৃদ্ধি এবং পরিপূর্ণ একটি জীবন গড়ার লক্ষ্যে আপনাকে অবশ্যই একটি বাজে অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে। আর তা হচ্ছে- কারণে অকারণে মানুষকে জাজ করা। মানুষকে সময়ে অসময়ে জাজ করা, সমালোচনা করা, সবকিছুতেই অভিযোগ করার মতো একটি বদভ্যাস। এই তিনটি স্বভাব এক হয়েই আপনার জীবনের সকল সুখ ধ্বংস করতে পারে। আপনার আত্মমর্যাদাকে নষ্ট করার জন্য এই তিনটি জিনিসই যথেষ্ট।

মানুষকে নেতিবাচকভাবে জাজ না করেই আপন করে নিন। তাদেরকে এভাবে বিশ্লেষণ করে কষ্ট দেবেন না। কোনরকম প্রত্যাশা ছাড়াই তাদের সাথে চলুন। মাইলের পর মাইল পথ চলুন অতিরিক্ত জাজমেন্টাল হওয়া ছাড়াই, যেহেতু আপনিও চান অন্যরা আপনাকে জাজ না করেই আপনার সাথে বন্ধুর মতো মিশে যায়।

জীবন চলার পথে আমরা সবাই ই নিজের জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলেছি। একের পর এক ঝামেলা সবসময়ই আমাদের সামনে চলে আসছে। আপনি জানেন না আপনার সাথে থাকা মানুষটি নিজ জীবনে কোন কোন প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই করে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। একইভাবে তারাও আপনার জীবনের জটিলতা সম্পর্কে জানে না। তাই মানুষকে সহসাই জাজমেন্টের জরিপে ফেলে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এ কারণে জাজমেন্টাল না হয়ে একটু সহানুভূতিশীল হোন। মানুষকে ভালোবাসতে শিখুন। মানুষের জীবন নিয়ে নানারকম মন্তব্য করা বেশ সহজ, কিন্তু তাদের জীবন পরিবর্তনে কাজ করা বেশ কঠিন।

আপনি কি জানেন যতবারই আপনি মানুষকে জাজমেন্ট করেন, ততবার আসলে নিজেকেই জাজ করেন?

একটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন, মানুষের কাছ থেকে আপনি সেসব বিষয় শুনতে পছন্দ করেন না, যেসব বিষয়ে নিজেকে নিয়ে আপনি নিজেই বিরক্ত। একইভাবে মানুষেরাও আপনার থেকে একই আচরণ প্রত্যাশা করে থাকে। অর্থাৎ তারাও চায় না আপনি তাদেরকে সেসব নিয়ে খোঁচা দিন, যেগুলো ক্রমাগত তাদের জীবনকে জটিল করে চলেছে। বরং আপনি এসব মানুষের বিভিন্ন জটিলতা থেকে শিক্ষা নিন। আপনার বন্ধু কি নিয়মশৃঙ্খলা মানে না? আনপাঙ্কচুয়াল? তাহলে এসব নিয়ে খোঁচাখুঁচি না করে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমি নিয়মানুবর্তী তো? শৃঙ্খলা মানি তো? এটাই আপনার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে। আপনার বন্ধুর বিশৃঙ্খল জীবন আপনাকে কোনো লাভ দিতে পারবে না। উল্টো এসব নিয়ে জাজমেন্টাল হয়ে আপনি নিজের বন্ধুকে হারাবেন। নিজের জীবনের নানা দিকে খেয়াল করাটাই আপনাকে এগিয়ে নেয়, সফল করে তোলে।

আপনাদেরকে একটা গল্প বলি। আমার এক বন্ধু ছিলো। সে সবসময়ই বলতো তার ক্লায়েন্ট লাস্ট মিনিটে এসে সবসময়ই তার সেশন ক্যানসেল করে দিতো। বেশ ভালো কথা। নিজের অসুবিধা নিয়ে সে ভালোই বলে গেলো। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমার সেই বন্ধুটি আমাদের মিটিং ই প্রায়শই শেষ মুহূর্তে ক্যানসেল করে দিতো। এবং এটা নিয়ে তার কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিলো না। তো পুরো ব্যাপারটা আসলে এমনই। আমরা নিজেকে জাজ করি না। তবে অন্যের বেলায় সবাই ডিগ্রিপ্রাপ্ত জাজের আসনে আসীন হই। অনুরোধ থাকবে, এই ধরণের কাজ কখনোই করবেন না।

সবচাইতে ভালো হয় নিজেকে একটি প্রশ্ন করতে পারেন- অন্য মানুষের মাঝে থাকা কোন কোন বিষয় আমাকে বিরক্ত করে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করুন। তারপর একটি তালিকা তৈরি করে নিন। আর বিরক্তিকর সেসব তালিকার সকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। ব্যস! আপনার নিজের জীবনকে আরেকটু উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে গেলো সহজেই। না আপনি জাজমেন্টাল হচ্ছেন, না বন্ধু হারাচ্ছেন, আর না কোনো সময় ও মানসিকতা নষ্ট হচ্ছে আপনার। লাভের ওপর লাভ, বন্ধুরা।

© ত্বাইরান আবির


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *