লেখক আসলে কেন লেখেন? এমন প্রশ্ন যদি করা হয়, তাহলে হাজারটা উত্তর আসবে। একেকজন একেক কারণে লেখালেখি করেন। ব্যক্তিভেদে সবার উত্তর হবে আলাদা। এটাই স্বাভাবিক। কেউ মনের শান্তির জন্য লেখেন, কেউ আদর্শ ছড়িয়ে দিতে লেখেন, কেউ লেখেন খ্যাতির জন্য, কেউবা টাকা আয়ের জন্য। এভাবেই চলছে সব। তবে দিনশেষে প্রকৃত লেখকের সংজ্ঞা ঘাঁটলে তারাই এগিয়ে থাকবেন, যারা নিজের অভ্যন্তরীণ সব বিষয় প্রকাশ করেন, মানুষের সাইকোলজি চিন্তা করে ব্যবসায়িক জায়গায় স্ট্যান্ড করেন না। কারণ, মানুষ অনেক কিছুই চায়, যা উত্তম নয়, একজন লেখকের সেসব লেখা উচিত নয় শুধু টাকা আয়ের কথা চিন্তা করে। এতে টাকা আয় হলেও সমাজের ওপর কোন ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হয় না।
এসব কথা মাথায় রেখে যারা লেখালেখি করেন, তাদেরই একজন হচ্ছেন- সাঈদ আজাদ। জাত লেখক। লেখক হবে তো এমন। মনস্তাত্ত্বিক দিক কিংবা লেখার ধরণে ও বিষয় নির্বাচন সবকিছুতেই সাঈদ আজাদের রয়েছে উৎকর্ষতার ছাপ। তার বেশকিছু লেখা পড়া হয়েছে আমার। বিশেষ করে প্রসঙ্গ যদি হয় ছোট গল্প লেখার, তাহলে সাঈদ আজাদ নিঃসন্দেহে উৎকৃষ্ট মানের একজন লেখক। অনলাইনে লেখা হোক কিংবা অফলাইনের ম্যাগাজিনে থাকা কনটেন্ট, সবদিকেই সমানতালে আছেন তিনি। বজায় রেখেছেন নিজের ধারাবাহিকতা। বিষয়বস্তু নির্বাচনে তিনি সাবধানী ব্যক্তিত্ব, লেখার ধরণে তিনি গতানুগতিক সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন সবসময়ই এবং এদিক দিয়ে সফল বলা চলে তাকে। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘উত্তরাধিকার’ এ আমি তার গল্প পড়েছিলাম, ছোটগল্প ছিলো সেটি। এছাড়াও পড়া হয়েছে তার উপন্যাস ও ছোটগল্পের বই। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, তাকে নিয়ে পাঠকদের আরও জানাশোনা দরকার, আরও পড়া দরকার সাঈদ আজাদের লেখা।
মাঝেমধ্যে আমার অবাক লাগে, কেন এই মানুষটিকে নিয়ে আলোচনা কম দেখা যায়। তার লেখা নিয়ে কথা হওয়া জরুরী। গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে ইতোমধ্যেই বেশকিছু লেখা লিখেছেন সাঈদ আজাদ, লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক উপন্যাস। ছোট্ট, সাবলীল বাক্যে পরিস্থিতির বয়ান দারুণভাবে উঠে এসেছে সেসব উপন্যাসে। নিজের লেখা গল্প ও উপন্যাসের চরিত্র বিন্যাসেও তিনি সফল। অগ্নিপ্রভাত উপন্যাসে এসবের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। যুদ্ধকালীন সময়ে একজন হাবিল, তার স্ত্রী মরিয়ম, মা এবং ভাইয়ের করুণ পরিণতি লেখক সাঈদ আজাদ তুলে ধরেছিলেন মুন্সীয়ানার সাথেই। পাঠক নিশ্চিতভাবেই চরিত্রগুলোর সাথে মিশে যেতে পারবে, উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে বিভীষিকাময় সময়ে তাদের দুঃখকষ্ট ও বাংলার মানুষের দুরবস্থা। সময়কে অনুভব করার জন্য চরিত্রায়ণ যে উৎকৃষ্ট হতে হয়, এটা সাঈদ আজাদ করে দেখিয়েছেন তার লেখা গল্প, উপন্যাসে।
এখন পর্যন্ত চারটি বই লিখেছেন সাঈদ আজাদ। এছাড়াও লিখেছেন অগণিত ছোটগল্প। লেখালেখির পথচলায় মোটামুটি লম্বা সময়ের পরিক্রমায় বেশকিছু ক্লাসিক্যাল লেখা উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তার লিখিত চারটি বই হচ্ছে- অগ্নিপ্রভাত, জলটুঙি, বিষন্ন জোছনা এবং নিসিন্দার ফুল। আশা করা যায় সামনের দিনগুলোতে অনেক দূর এগিয়ে যাবেন সাঈদ আজাদ। যতটুকু তার সম্পর্কে জানতে পেরেছি, তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে নিজের মাঝে লেখক সত্ত্বাকে গভীরভাবে ধারণ করেন সাঈদ আজাদ। আর সেজন্যই তার লেখায় উঠে আসে আপামর মানুষের দুঃখবোধ, চিন্তাধারা ও জীবনাচরণ। জীবনের পরতে পরতে সুখও যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, হোক তা সাধারণ মানুষের জীবনেও, সেসবও লেখক সাঈদ আজাদ তার লেখায় তুলে এনেছেন। আশা করা যায় ভবিষ্যতেও তার কলম এভাবেই চলতে থাকবে। আর তার হাত ধরেই বাংলাদেশের মানুষ পাবে কোন একটি মাস্টারপিস কিংবা ক্লাসিক্যাল সব সাহিত্যের দেখা। বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত আকাশে জ্বলজ্বল করে জ্বলবে লেখক সাঈদ আজাদের নাম, এই প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।
শক্তিশালী লেখকের গল্পে আমি এবার সাঈদ আজাদের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। কেন তিনি শক্তিশালী একজন লেখক, সে বিষয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি শক্তপোক্ত যৌক্তিক অবস্থান। তবুও শেষটায় বলি, সাঈদ আজাদ টিকে থাকবেন তার বিষয়বস্তু নির্বাচন, চরিত্র নির্মাণ ও কলমের শৈল্পিকতায় বর্ণিল আকারে জন মানুষের গল্প বলা ও প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তোলার জন্য।
লেখকঃ ত্বাইরান আবির
লেখক/অনুবাদক/প্রাবন্ধিক