আচ্ছা, ধরা যাক আপনার নানা পরিস্থিতিতে কিছু মানুষ আপনাকে পরামর্শ দেয়। বুদ্ধি দেয়ার মানুষ আছে আপনার। বেশ ভালো। আপনার জীবনের সকল পরিস্থিতি বুঝে তারা আপনাকে সিদ্ধান্ত দেয়, জেনে ফেলে আপনার সব, ব্যাপারটা চমৎকার না? একটু বেশিই চমৎকার। এই চমৎকারের খেসারতই আপনাকে পরবর্তীতে গুনতে হবে। এর চাইতেও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, যেসব মানুষ আপনাকে প্রতিনিয়তই পরামর্শ দিতে থাকে এবং পরামর্শ দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে, তাদের কথার সাথে কাজের মিল থাকে না। তাদের নিজের জীবনেই নিজস্ব কথার কোনো উদাহরণ নেই। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই বিষয়টা এমন।
উদাহরণস্বরূপ, একজন রোগাপটকা ব্যক্তির আরেকজনকে স্বাস্থ্যবান হওয়ার পরামর্শ দেয়া। একজন দেউলিয়া ব্যক্তির আরেকজনকে পরামর্শ দেয়া অর্থনৈতিক জ্ঞান সম্পর্কে। আবার পারিবারিক জীবনে অসুখী একজন মানুষ কতৃক অন্য আরেকজনকে ফ্যামিলি লাইফে হ্যাপি হওয়ার পরামর্শ দেয়া। এই লিস্ট আরো বড় করা সম্ভব। তবে আমি বড় করতে চাচ্ছি না। যেসব বাকপটু মানুষ নিজেদের কথাবার্তা নিয়ে সবসময়ই হাজির হতে থাকে, তাদের কাছ থেকে আমি মূলত একটা পরামর্শই নিতে আগ্রহী, আর তা হচ্ছে- তারা যা করবে, আমি তার উল্টোটা করবো।
মানুষের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার ক্ষেত্রে এই থিওরিই আমি সবসময় অবলম্বন করে এসেছি। এতে করে নিজের জীবনের অনেক কিছুই বদলাতে সক্ষম হয়েছি। সবসময়ই মানুষের পরামর্শ আপনাকে সাহায্য করবে না। আর পরামর্শ যেমনই হোক, সিদ্ধান্ত আপনার নিজেরই নেয়া উচিত। অপরের পরামর্শ নেয়ার ক্ষেত্রে একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারা যেচে গিয়ে নিজের পরামর্শ আপনার ওপর চাপিয়ে দেয় না। তবে আপনি যদি তাদের কাছে কোন পরামর্শ চান, তাহলে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকবে যাতে তাদের কথামতোই কাজ করেন আপনি এবং সিদ্ধান্ত নেন।
সুতরাং একটা বিষয় তো স্পষ্ট যে, আপনাকেই আপনার নিজ জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্য কাউকে সিদ্ধান্ত নিতে দেবেন না। অন্যদের জীবনে যেসব বিষয় কাজ করেছে, সেসব আপনার জীবনে কাজ করবে না। তাছাড়া ব্যক্তিগত ও স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে আপনি আলাদা। এমন অনেক ব্যাপার রয়েছে, যেখানে আপনার নিজের স্বভাব ও ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আনা জরুরী জীবনমান উন্নত করার জন্য। তাই নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিন। আপনার ব্যাপারে সবচাইতে বেশি আপনিই জানেন। নিজের সম্পর্কে সবচাইতে বেশি তথ্য আপনার কাছেই রয়েছে। আপনিই জানেন। সুতরাং কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে কাজ করলে আপনার ভালো হবে এবং কোন সিদ্ধান্ত আপনার জন্য সর্বোত্তম ফলাফল এনে দেবে, এটা আপনিই ভালো বোঝেন, অন্যরা নয়।
নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত অন্যের ওপর ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে দু’টি সমস্যা রয়েছে। এক, মানুষ আপনার জীবনকে তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত দেয়। ফলে এসব সিদ্ধান্ত ঠিক তাদের মনমতো হয়, আপনার নিজস্ব চাওয়া অনুসারে হয় না, আপনি মনমতো ফলাফল পান না। দুই, বারবার আপনার সিদ্ধান্তগুলো অন্য মানুষেরা নেয়ার ফলে আপনি নিজের জীবনে নিজেই সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতা হারান। ফলে যাপিত জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি আপনাকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগাবে, দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলবে, হতাশ করে তুলবে। এ কারণে কখনো কখনো আপনি নিজের ওপর কতৃত্ব হারাবেন। জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতেও আপনাকে হিমশিম খেতে হবে।
কাজেই, আপনার নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিন। এক্ষেত্রে মানুষের পরামর্শ শুনতে হলে মনোযোগ সহকারে শুনুন। এটা আপনাকে নানাদিক দেখতে সাহায্য করবে। সুনির্দিষ্ট ঘটনা সম্পর্কে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে দেবে। তারপর শেষ পর্যন্ত নিজেই সিদ্ধান্তই নিন, অপরের সিদ্ধান্ত নয়। এক্ষেত্রে কারণ হিসেবে আমি আপনাকে দু’টি বিষয় জানাতে চাই। প্রথমত, আপনার জীবনের ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে সবচাইতে ভালো আপনিই বোঝেন। পৃথিবীর অন্য কোন মানুষের পক্ষে আপনার চাওয়া, রুচি, মানসিকতা বোঝা সম্ভব নয় পুরোপুরি। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে আসন্ন সকল পরিস্থিতি আপনাকেই সামলাতে হবে। সেসব পরিস্থিতিতে আপনার পাশে কেউ থাকবে না। ট্রাস্ট মি, যারা আপনার জীবনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবে, তারাও পাশে থাকবে না। সামগ্রিকভাবে পাশে থাকা সম্ভবও নয় তাদের পক্ষে। এটাই বাস্তবতা। তারপর যখন আপনার কোনো খারাপ অবস্থা হবে তাদের সিদ্ধান্তের জন্য, তখন তারা পরিস্থিতি ও ভাগ্যের দোষ দিয়ে কেটে পড়বে। আপনার জীবন আপনাকেই পার করতে হবে। নিজের ভালো চাইলে আপনাকে তাই নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে। নিজের কাজ, নিজের পরিস্থিতি, নিজের জীবন- সিদ্ধান্ত যখন নেবেনই, নিজেই নিন, অপরের সিদ্ধান্তে চলবেন না।
আপনার সিদ্ধান্ত সবসময়ই পারফেক্ট হবে, এমনটা নয়। পারফেক্ট হতেই হবে সবসময়, তাও নয়। তবুও নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিন। সিদ্ধান্ত ভালো হলে সুন্দর জীবন আপনার। আর খারাপ হলেও সেখান থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারবেন আপনি। মানুষের সিদ্ধান্তে নিজেকে পরিচালিত করার কোন মানেই হয় না। কেননা সেখানে আপনার চাওয়ার কোন মূল্য নেই, ভালোমন্দে আপনার হাত নেই। অথচ নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার ক্ষেত্রে সকল সুবিধাই আপনার!
সুতরাং, এখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিন নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবেন নাকি অপরের হাতে দেবেন।
‘লাভ ইয়োরসেলফ ফার্স্ট’ বই হতে অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো। আশা করি উপকৃত হয়েছেন। হ্যাপি রিডিং।
© ত্বাইরান আবির